এবার অবৈধভাবে দেশ ছেড়ে পালানোর সময় শুক্রবার (২৩ আগস্ট) বিজিবির কাছে আটক হয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। দেশের ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত ও সমালোচিত বিচারপতি তিনি।
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি থাকাকালে একের পর এক বিতর্কিত রায় দিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন তিনি। এমনকি ২০১৫ সালে অবসরে যাওয়ার পরও আলোচনায় ছিলেন তিনি।
সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের নারী উপস্থাপিকার সঙ্গে খারাপ আচরণ ও তাকে রাজাকারের বাচ্চা বলে সম্বোধন করে ফের আলোচনায় আসেন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। সেই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদেরও রাজাকারের বাচ্চা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জানা গেছে, কর্নেল তাহের হত্যা মামলায় বিতর্কিত রায় বিচারপতি মানিককে আলোচনায় নিয়ে আসে। ওই রায়ে মানিক কর্নেল তাহেরের বিচারকে ‘ঠান্ডা মাথার খুন’ হিসেবে বর্ণনা করেন। সেসময় জিয়াউর রহমানকে ‘ঠান্ডা মাথার খুনি’ হিসেবে বর্ণনা করেন বিচারপতি মানিক।
এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলের রায়ের বেঞ্চেও তিনি ছিলেন অনন্য। রায়ে কেবলমাত্র তিনিই সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন। ২০১৫ সালে অবসরে যাওয়ার পরও ১৬১টি মামলায় রায় লেখা বাকি ছিল তার।
এ নিয়ে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান তিনি। অবসর নেওয়ার পরও বিতর্কিত রায় দেওয়ার কারণে সুপ্রিম কোর্ট মানিকের রায় দেওয়া ১৬১টি মামলা পরিহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের হয়ে বিভিন্ন সময়ে বেশকিছু মামলায় বিতর্কিত রায় দেন বিচারপতি মানিক।
অভিযোগ রয়েছে, দেশের কোনো আইনকানুনের তোয়াক্কা করেননি আলোচিত এই বিচারক। দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতি, যাকে ইচ্ছা তাকে নির্যাতন ও হয়রানি করেছেন। বিচারপতি মানিকের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়, আইন ভঙ্গ ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে সম্পদের হিসাব গোপন এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের শপথ ও আচরণবিধি ভঙ্গ করেছিলেন।
তৎকালীন আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ জন বিচারককে ডিঙ্গিয়ে মানিককে বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছিলেন। হাইকোর্টের বিচারকের গাড়িকে সালাম না দেওয়ার কারণে এক ট্রাফিক সার্জেন্টকে আদালতে কান ধরে উঠবস করিয়েছিলেন তিনি। ওই ঘটনায় পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক শহীদুল হক মন্তব্য করায় তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করা হয়। এতে মহাপরিদর্শকের পদ হারান শহীদুল হক। পরে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার কারণে শহীদুল হক চাকরি ফিরে পান।
এছাড়া বিমানে ইকোনমি ক্লাসের টিকিট কিনে জোরপূর্বক বিজনেস ক্লাসের আসনে বসে লন্ডনে যাওয়ার মতো কীর্তি রয়েছে তার। বিচারপতি মানিক ৩২ হাজার পাউন্ড দিয়ে লন্ডনে তিনটি বাড়ি কিনেছেন। বাড়ি ছাড়াও লন্ডনে আরও সম্পত্তি আছে তার। দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়েও হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে বিচারকাজ চালিয়ে গেছেন বিচারপতি মানিক।
অবসরে যাওয়ার পরও ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বিচারপতি মানিক। অবসরে যাওয়ার পর এক বছরের বেশি সময় রাজধানীর গুলশানের একটি সরকারি বাড়ি দখলে রেখেছিলেন তিনি। পরে ২০১৭ সালে তিনি বাড়িটি ছাড়লেও বাড়িভাড়া, গ্যাস ও পানি বিল বাবদ সরকারের পাওনা ১৪ লাখ ১৯ হাজার ২০০ টাকা এখনও পরিশোধ করেননি সুপ্রিম কোর্টের সাবেক এই বিচারক।